নজরুল ইসলাম, নান্দাইল প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের নান্দাইলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রাম থেকে অজ্ঞাত (৭০) এক বৃদ্ধের জবাইকরা মরদেহ উদ্ধার করে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন ও মূল আসামীদের গ্রেফতারে ব্যাপক তৎপরতা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ময়মনসিংহ পিবিআই ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধানে পিবিআই ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস এর সার্বিক সহযোগিতায় ৬ দিনে চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টানা ৩৪ ঘন্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও মূল হত্যাকারী আবুল হাসান (৩৫)কে গ্রেপ্তার করে। পিবিআই সূত্রে জানাযায় : নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার তেলিয়া গ্রামের আ: ছাত্তারের পুত্র মো. ফজলুল হক। ফজলুল হক তার স্ত্রী সন্তানসহ শ্বশুর বাড়ীতে থাকতেন। গত সাত বছর পূর্বে স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য তার নিজ বাড়ী নরসিংদী সদরের খাটেহারা পূর্বপাড়ায় একাই বসবাস করতেন। বাড়ির অন্য বাসাগুলো ভাড়া দিয়ে দিতেন। টেক্সটাইল মিলে চাকরি করার সুবাদে নান্দাইল উপজেলার কালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের পুত্র হত্যাকারী আবুল হাসান তার স্ত্রী নাজমীন আক্তারকে নিয়ে দেড় বছর যাবত ফজলুল হকের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এ কারনে ফজলুল হক ও আবুল হাসানের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। হত্যাকান্ডের সপ্তাহ খানেক আগে হত্যাকারী আবুল হাসান তার স্ত্রী নাজমীনের সিজারের জন্য ফজলুল হকের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা ধার নেয়।
এসময় হত্যাকারী ফজলুল হকের কাছে কিছু নগদ টাকা দেখতে পান। পরে আবুল হাসান আবারও ফজলুল হকের নিকট টাকা ধার চাইলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করে। এতে হত্যাকারী আবুল হাসান ফজলুল হকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং পুরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। আবুল হাসান কৌশলে ফজলুল হক কে তার নিজ বাড়ি কামালপুর এলাকায় বেড়াতে রাজী করান। গত ২২ সেপ্টেম্বর নান্দাইলে নিয়ে এসে একদিন সেদিক ঘুরাফেরা করে রাত গভীর হলে বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে ধান খেতের আইলে ফজলুল হককে ধারালো দা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। হত্যার পর ঘটনাস্থলেই হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা’টি ঢিল দিয়ে ধান খেতে ফেলে দেয়। ফজলুল হককে হত্যার পর হত্যাকারী তার সাথে থাকা পাঞ্জাবীর পকেটে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ২ (দুই) টি মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় আবুল হাসান। হত্যাকান্ডের পর পিবিআই তদন্তকালে ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমে অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে। নিহত ফজলুল হকের বাড়ি নরসিংদী সদর খাটেহারা এলাকায় ।
গত মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় হত্যাকান্ডের প্রদান আসামী আবুল হাসানকে নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার ফুলতলা গ্রামের চাঁন মিয়ার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তার কাছ থেকে লুন্ঠিত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে নগদ ৮ হাজার টাকা, ২ (দুই) টি মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড ও মৃতের কাপড় সহ ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস উদ্ধার করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার বিকালে আসামীর সনাক্তমতে নান্দাইলের কামালপুর থেকে ঘটনাস্থলের পাশের ধান ক্ষেত হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করে ।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রামের চৌকিদার মজিবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে নান্দাইল থানায় মামলা নং-২৬ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দঃবিঃ দায়ের করেন। এ বিষয়ে পিবিআই ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা সে জন্য আসামীকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে মামলাটি পিবিআই কর্তৃক অধিগ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। আজ বুধবার আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।